ইমদাদুল হক, আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিনিধি: ঢাকার সাভারস্থ আশুলিয়ার বাইপাইলে প্রকাশ্যে বিক্রী হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন। সাভারের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, অভিজাত রেস্টুরেন্ট, মুদির দোকান, কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে ফুটপাতের প্রায় সব দোকানের পণ্য বহনে ব্যবহৃত হচ্ছে পলিথিন ব্যাগ। সহজলভ্য ও ব্যবহারে সুবিধা থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই ক্ষতির দিক বিবেচনা না করে পলিথিন ব্যাগ অবাধে ব্যবহার করছেন।
আজ রোববার (১০ অক্টোবর) সাভারস্থ আশুলিয়া থানাধীন বাইপাইল আড়ত সংলগ্ন এরকম বেশ কয়েকটি দোকানে পলিথিন প্রকাশ্যে বিক্রী হতে দেখা যায়। ছোট ছোট পাঁচমিশালী দোকান, হার্ডওয়্যারের দোকান এমনকি শুধু পলিথিনই বিক্রী করে এরকম ১০ থেকে ১৫টি দোকানে এসব নিষিদ্ধ পলিথিন বিক্রি হচ্ছে অবাধে। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে এসব দোকান থেকে পলিথিন কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
আর বাইপাইল আড়তের কাঁচাবাজার ও মাছের বাজারে এসব পলিথিন দেদারছে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে ব্যবহার শেষে ফেলে দেওয়া এসব পলিথিন বাতাসে উড়ে কিংবা পানিতে ভেসে স্থানীয় নলীর খালে গিয়ে খালের তলদেশ ভরাট করছে। সাভার এবং আশুলিয়াবাসীর অন্যতম সমস্যা জলাবদ্ধতা। খাল-বিল ও নদীনালা দখল এর প্রধান কারণ হলেও বিশেষজ্ঞদের মতে পলিথিন এই জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ।
ডেনমার্কের কোপেনহেগেন ভিত্তিক সংস্থা ‘দ্য ওয়ার্ল্ড কাউন্টস’ বলছে, বিশ্বে প্রতিবছর ৫ লাখ কোটি পিস পলিথিন ব্যাগ ব্যবহৃত হয়। এর মাত্র ১ শতাংশ পুনর্ব্যবহারের জন্য প্রক্রিয়াজাত করা হয়; আর সমুদ্রে ফেলা হয় ১০ শতাংশ। এসব পলিব্যাগ একশ’ বছরেও পচে না, মাটির সঙ্গে মিশে না। সাভারে বাসাবাড়ির ময়লা যা মূলত পলিথিনে ভরে ময়লার গাড়িতে ফেলার জন্য রাখেন সবাই। একটি চক্র টাকার বিনিময়ে মহাসড়ক এবং খাল-বিলের সন্নিকটে এদব ময়লা গাড়িতে করে ফেলে যায়।
এসব পলিথিন নালা-নর্দমা ও খালে পড়ে ড্রেণ এবং জলাশয়ের তলদেশ ভরাট করে ফেলে। ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে, ভোগান্তিতে পড়ছে লাখো মানুষ। উপচে পড়া পানিতে নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক ও মহাসড়ক। পরিবেশবিদরা বলছেন, নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহারে শাস্তির বিধান রেখে আইন করা হলেও কমেনি পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার। পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যবহারে পরিবেশের ক্ষতির কথা চিন্তা করে ২০০২ সালে পলিথিন নিষিদ্ধ করা হয়। তখন বিকল্প হিসেবে কাগজ ও পাটের ব্যাগের প্রচলন শুরু হয়। পরবর্তীসময়ে আইনের প্রয়োগ না থাকায় পলিথিন বিক্রি ও ব্যবহার বেড়েছে জ্যামিতিক হারে।
তবে বাংলাদেশে প্রতিদিন কী পরিমাণে পলিথিন উৎপাদন ও ব্যবহার হয় এবং শেষে বর্জ্য হিসেবে নালা-নর্দমা, খালবিলে জমা হয়, এ নিয়ে সরকারি কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য বা হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্বের ১৯৩টি দেশের প্লাটফর্ম ‘আর্থ ডে নেটওয়ার্ক’ এর এক গবেষণায় পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদনে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দশম। প্রথমে আছে- চীন, ভারত ১২তম অবস্থানে, পাকিস্তান ১৫তম ও মিয়ানমার ১৭তম অবস্থানে আছে।
তবে এব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর নেতৃবৃন্দ জানান, পলিথিন নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ। সারা দেশেই পলিথিন তৈরির কারখানার সংখ্যা বেড়েছে। সরকার যদি আন্তরিকভাবে পলিথিন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে এটা বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। এ ছাড়া সম্ভব নয়। অপরদিকে পলিথিন ব্যবসায়ীরা বলছেন, পলিথিনের কারণে পরিবেশের ক্ষতি হোক, তারা তা চান না। কিন্তু পলিথিনের মতো সহজলভ্য কোনো পণ্য বাজারে নেই।
সেক্ষেত্রে এর বিকল্প তৈরী না করা পর্যন্ত পলিথিনের বিক্রী এবং ব্যবহার রোধ করা যাবে না। বাইপাইলে অবাধে নিষিদ্ধ পলিথিন বিক্রীর বিষয়টি নিয়ে মুঠোফোনে আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার হোসেন জানান, বিভিন্ন সময় এবিষয় নিয়ে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। বিষয়টি জানলাম এবং এব্যাপারে সাভার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।