গর্জন প্রতিবেদক: প্রেম ভালবাসা কোন জাতকুল মানেনা, একথা কমবেশি সবারই জানা।পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে সমলিঙ্গে প্রেমের কাহিনী স্বাভাবিক।কিন্তু আমাদের চিরচেনা বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন অসামঞ্জস্যপুর্ণ ঘটনা ঘটলে তা যে রীতিমতো পিলে চমকানোর মতো, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। অথচ সোমবার (২১ মার্চ) এমনই এক পিলে মতো, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। অথচ সোমবার (২১ মার্চ) এমনই এক পিলে মতো, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
অথচ সোমবার (২১ মার্চ) এমনই এক পিলে চমকানোর মতো অবাক করা প্রেমের বিরল ঘটনা ঘটেছে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার ফুলকি ইউনিয়নের ময়থা গাছপাড়া গ্রামে। ফেসবুকের গ্রুপ মেসেনজারে এসএমএস ও ছবি আদান-প্রদানের মাধ্যমে সখ্যতা গড়ে উঠে নোয়াখালি ও টাঙ্গাইলের দুই কিশোরীর মধ্যে। এই সখ্যতাই রূপ নেয় গভীর প্রেমের সম্পর্ক।
দুই বছর ধরে চলে এই প্রেম। স্বশরীরে সাক্ষাৎও হয়েছে বিলকিছ ও আঁখি নামের এই দুই কিশোরীর। ফিরে যেতেও হয়েছে অভিভাবকদের চাপে।কিন্তু অদম্য প্রেমের টানে দূরপথ পেরিয়ে আবারও একত্র হয়েছে এই দুই কিশোরী।
দুই কিশোরীর প্রেমের এই বিরল কান্ড ভিন্ন মাত্রায় চলে যাওয়ায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। অবাক করা এই কান্ড দেখতে ভিড় করছে এলাকার উৎসুক জনতা। ঘটনাটিককে কেন্দ্র করে কৌতুহলী জনতার হাজারো প্রশ্ন, আলোচনা ও সমালোচনার মুখে মানষিক চাপ ও দুশ্চিন্তা ও মহাবিপাকে দিন কাটছে আখির সহজ সরল বাবা মাসহ পরিবারের।
গতকাল সোমবার (২১ মার্চ) এমনই বিরল ঘটনা ঘটেছে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার ময়থা গাছপাড়া গ্রামে। প্রেমের টানে ছুটে আসা বিলকিছ আক্তার (১৭), গ্রামের আজাহার আলী ও জোসনা বেগম দম্পতির নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে। স্থানীয়রা জানান, বিলকিছ ও আঁখির সঙ্গে প্রায় দুই বছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয়।
সেই থেকেই ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রেমের টানে তারা প্রায় দুই মাস আগে ঢাকার সাভারে এক আত্মীয়ের বাসায় রাত্রিযাপন করে। এরপর সেখান থেকে আনোয়ার নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে তারা সিরাজগঞ্জের চৌহালী গিয়ে রাত কাটায়। ওই এলাকার স্থানীয়দের কাছে এই দুই কিশোরীর আচরণ সন্দেহজনক হলে বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়। একপর্যায়ে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে দুই পরিবারের কাছে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়। সর্বশেষ রবিবার (২০ মার্চ) বিলকিছ ও আঁখির ফোনে কথা হয়।
এরপর সন্ধ্যায় বিলকিছ টাঙ্গাইল শহরে আসলে আঁখি স্কুল থেকে সেখানে গিয়ে তার বাড়িতে নিয়ে আসে। ওই রাতেই তাদের অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। তাদের দেখতে দলে দলে লোকজন গিয়ে ওই বাড়িতে ভিড় জমান। তারা একে অপরবে ছাড়া বাঁচতে পারবে না।বাচলেও এক সাথে মরলেও এক সাথে।
এমন কি তারা কেউ অন্য কোন ছেলেকে বিয়ে করে সংসারও করবে না। এই দুই কিশোরী সংসার পাতার সিদ্ধান্তও নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আঁখির পরিবারও হতভম্ব। এই দুই কিশোরীর অস্বাভাবিক, ব্যাতিক্রমী ও আমাদের সমাজ ব্যবস্থার সাথে অসামভ্জস্যপুর্ণ প্রেমে আসক্তির ঘটনা সামাজিক অবক্ষয়ে একটি বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
সচেতন মহলের দাবি- ‘বাংলাদেশে সমলিঙ্গের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কের এমন বিরল ঘটনা কখনও শুনিনি। এই দুই কিশোরীর অযৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার মতো না। এটা পাগলামি ছাড়া কিছু না। খুব দ্রুত দুইটি মেয়েকেই পৃথক করা প্রয়োজন। কিশোরীদের অপরিণত চিন্তা এবং অবান্তর সিন্ধান্তের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে এসে তাদের স্বাভাবিক নিরাপদ জীবনযাপনের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ বিশেষভাবে প্রয়োজন।
আঁখির বাবা আজাহার আলী বলেন, ‘আমি আঁখিকে দেড় মাস বয়সে পালতে এনেছি। ও আমার আদরের একমাত্র সন্তান। তার এমন কা-ে আমি খবুই কষ্ট পেয়েছি। নোয়াখালীর ওই মেয়েটিকে তার বাড়িতে চলে যেতে বলছি- সে যাচ্ছে না। সে কিছুতেও আঁখিকে ছাড়া যাবে না। পরে তার পরিবারকে বিষয়টি জানানো হলে তারা এখানে আসবে না বলে আমাকে জানায়।
প্রশাসনকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। আমি বিষয়টি নিয়ে খুবই বিপদে আছি।’ ময়থা গাছপাড়া এলাকার ইউপি সদস্য সেকান্দার আলী স্বপন বলেন, ‘নোয়াখালীর ওই মেয়েটি রবিবার সন্ধ্যায় এসেছে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। দুই কিশোরীর দাবি- তারা কেউ কাউকে ছাড়া থাকবে না। তারা গার্মেন্টসে চাকরি করে একত্রে সারাজীবন কাটাবে বলে জানায়।
এ ক্ষেত্রে বিলকিছ আঁখিকে স্বামী হিসেবে জীবন সঙ্গী করবে বলেও জানায়।’ আঁখি ও বিলকিছ বলেন, ‘ফেসবুকের মাধ্যমে আমাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কের তৈরি হয়। আমরা এখন কেউ কাউকে ছাড়া থাকতে পারবো না। প্রয়োজনে আমরা বাড়ি ছেড়ে গার্মেন্টসে চাকরি করে দুইজনে সংসার করে খাবো।’ বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা পারভীন বলেন, ‘স্থানীয় চেয়ারম্যান সাহেব বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে নোয়াখালীতে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।
মেয়েটির প্রকৃত অভিভাবকের খুঁজ পেলে তাদের হাতে মেয়েটিকে ফিরিয়ে দেবো। আর তার পরিবার খুঁজে না পেলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।’ বাসাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যের সঙ্গে কথা হয়েছে। নোয়াখালীর ওই মেয়েটির পরিবারকে তারা বিষয়টি জানিয়েছে।
মেয়েটির পরিবার আসলে তাকে ফিরিয়ে দিতে বলেছি।’ এদিকে, দুই কিশোরীর এই অবান্তর প্রেমের ঘটনায় দুইটি পরিবার অজানা এক আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে। কি হবে এই দুই কিশোরীর প্রেমের পরিণতি এমন শত প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ মানুষের মাঝে।
খবরটি শেয়ার করুন....